বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জমি দখলে বেপরোয়া রুহুল আমিন হাওলাদার। কালের খবর মাটিরাঙায় সেনা অভিযানে ১৪ লাখ টাকার অবৈধ সিগারেট জব্দ। কালের খবর দুর্গম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেনাবাহিনীর শিক্ষা উপকরণ বিতরণ। কালের খবর ঈশ্বরগঞ্জে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় তারুণ্যের উৎসবে বর্ণাঢ্য র‍্যালি। কালের খবর খাগড়াছড়িতে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত। কালের খবর মুন্সিগঞ্জে জাতীয় পার্টির ৩৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত। । ‘এবার টার্গেটে সাংবাদিকদের সন্তানেরা’ চট্টগ্রামের মানববন্ধনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম। কালের খবর ঈশ্বরগঞ্জে হতদরিদ্রের লাখ লাখ টাকা নিয়ে এনজিও উধাও। কালের খবর ঈশ্বরগঞ্জে সাংবাদিকদের সঙ্গে ইউএনও’র মত বিনিময়। কালের খবর
ডেমরায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জায়গায় এসটিএস নির্মাণ, এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে

ডেমরায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জায়গায় এসটিএস নির্মাণ, এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে

এম আই ফারুক , ডেমরা, ঢাকা। 
রাজধানীর ডেমরায় মাতুয়াইল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের এসটিএস’র (সেকেন্ডারী ট্রান্সফার স্টেশন) নির্মাণ কাজ চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এলাকাবাসী ও চিকিৎসাসেবা গ্রহনকারীদের মাঝে।
এক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জোরপূর্বক নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ডিএসসিসির অসাধু ঠিকাদার মো. সাদ্দাম হোসেন। এদিকে ওই পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ এলাকাবাসীর বাঁধা উপেক্ষা করে এসটিএস’র নির্মাণ কাজ বহাল রাখতে এখানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাও করা হয়েছে। এমনকি সিটি কর্পোরেশন ও মেয়র ফজলে নুর তাপসের নামেও নানা হুমকি ধমকি দিয়ে নির্মাণ কাজ চলমান রাখছেন ঠিকাদার সাদ্দাম হোসেনসহ তার লোকজন। এদিকে সাস্থ্য কেন্দ্রটির কর্মকর্তারা থানা পুলিশে যোগাযোগ করেও কোন সুরাহা পাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

এলাকাবাসীসহ সাস্থ্যকেন্দ্রটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ, বিগত ১৯৭৭ সালে দানকৃত দলিলের মাধ্যমে ডেমরার ডগাইর এলাকার মো. রোস্তম আলী মাতুয়াইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নামে পূর্ব ডগাইর এলাকায় ৪৮ শতাংশ জমি দান করেন। এক্ষত্রে প্রত্যন্ত এলাকা হিসেবে দুস্থ অসহায়সহ সাধারণ মানুষের মাঝে সরকারি চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যেই তিনি ওই জমি দান করেন। ওই দানকৃত দলিলে শর্ত রয়েছে জমি গ্রহীতা শুধুমাত্র স্বাস্থ্যসেবার জন্যই জমিটি ব্যবহার করতে পারবেন, অন্যথায় জমিটির মালিক বা ওয়ারিশগণ সম্পত্তি ফেরত নিতে পারবে। এদিকে শর্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা ব্যতীত কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জায়গাটি কোনভাবেই দখল বা নির্মাণ কাজে ব্যবহার করার ক্ষমতা রাখেনা।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জায়গাটিতে এসটিএস নির্মার্ণের কাজ বন্ধ রাখার জন্য উচ্চ আদালত গত ১৪ মার্চ ৬ মাসের স্থগিতাদেশ জারি করেন। এদিকে আদালতের এ নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কথিত ডিএসসিসির ঠিকাদার সাদ্দাম হোসেন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এ কাজ বহাল রাখতে ডিএসসিসির সম্পত্তি বিষয়ক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন থানা পুলিশ নিয়ে। এ সময় বৈধতার কাগজ, ভূমি ব্যবহার বা নির্মাণ কাজের অনুমোদন চাওয়া হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান দেখাতে পারেন নি।

তাদের আরও অভিযোগ,এলাকাবাসী ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কর্মরতরা এ ঘটনায় থানা পুলিশের কাছে হাইকোর্টের রিট নিয়ে গেলেও পুলিশ কোন প্রকার ভূমিকা নেয়নি। আর এ সুযোগে দ্রুত গতিতে অবৈধভাবে এসটিএস নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে থানা পুলিশ ও স্থানীয় ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মতিন সাউদের বিনা নজরদারির কারণে ঠিকাদার সাদ্দাম হোসেন টেন্ডার ভিত্তিক ওই এসটিএসর নির্মাণ কাজ করছেন। এক্ষেত্রে থানা পুলিশ ও স্থানীয় ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মতিন সাউদের বিনা নজরদারির কারণে ঠিকাদার সাদ্দাম হোসেন টেন্ডার ভিত্তিক ওই এসটিএসর নির্মাণ কাজ করছেন।

এ বিষয়ে জমির মালিক মরহুম রোস্তম আলীর ছেলে মো. শওকত আলী জানান, আমার বাবা একজন সমাজসেবক, দানবীর ও শিক্ষানুরাগী হিসেবে পূর্বের প্রত্যন্ত এ এলাকায় অন্তর্ভুক্তিমূলক সমতাভিত্তিক শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে বড় পরিসরে রোস্তম আলী স্কুলের জন্য জমি দান করেছেন। অবহেলীতদের সরকারি চিকিৎসাসেবায় মাতুয়াইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের জন্য ৪৮ শতাংশ জমি দান করেছেন। অথচ কতিপয় অসাধুরা এ জায়গাটিকে অবৈধ দখল করে ময়লা রাখার এসটিএস বানাতে চাইছেন।

তিনি আরও বলেন, কালের আবর্তে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটির ভবন পরিত্যক্তসহ রাস্তা উঁচু হওয়ায় জমিতে বছরে ৬ মাস ব্যাপী পানি বন্দি থাকে। তাই এখানে ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায়না বলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তর কেন্দ্রটি পুন:নির্মাণের জন্য ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে বাজেট প্রনয়ন করেন। ওই বাজেটে বেরাইদ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রসহ মাতুয়াইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের বাজেট প্রনয়ন করা হয়েছে। যেখানে নতুন ভবনের কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল গত বছর ৮ আগস্টের মধ্যে। ওই দু’টি ভবন উন্নয়নের জন্য ৫ কোটি ৬৩ লক্ষ ৮ হাজার টাকা বাজেট করা হয়েছে। অথচ এখানে ডিএসসিসির এসটিএস নির্মাণ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জায়গাটি দখলে নিয়ে সাধারণ মানুষের সরকারি চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত করতে চাইছেন কতিপয় অসাধুরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির জমিতে নির্বিঘ্নে এসটিএস নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে প্রয়োজনীয় আইনানুগ সহযোগীতা প্রদানের লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ নামীয় একটি চিঠি পাঠানো হয় ডিএমপির পুলিশ কমিশনার বরাবর। আর ওই চিঠির ভিত্তিতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ঠিকাদার সাদ্দাম হোসেন অনুমোদনহীনভাবে নির্মাণ কাজ চালাচ্ছেন যা আইনবিরোধী।

ঠিকাদার সাদ্দাম হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, আমি ডিএসসিসি থেকে টেন্ডার ভিত্তিক কাজ পেয়েছি বলে তাদের অনুমতি অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে উচ্চ আদালত থেকে জমি দাতারা যে রিট এনেছেন তা বৈধ নয় বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে ডিএসসিসিও আদালত থেকে কাজের অনুমোদনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন যা মেয়র মহোদয় ডিএসসিসির আইন বিষয়ক কর্মকর্তার মাধ্যমে করাচ্ছেন। ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। আর আদালতেরে অনুমোদন দ্রুত আমরা হাতে পেয়ে যাব বলে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ আমাকে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন।

এ বিষয়ে ডেমরা থানার ওসি খন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে আমাদের কোন পদক্ষেপ নেওয়ার এখতিয়ার নেই আদালতের অনুমোদন ব্যতীত। এক্ষেত্রে অবৈধভাবে এসটিএস নির্মাণের বিষয়ে আদালত থেকে যদি আমাকে কোন নির্দেশনা দেওয়া হয় তাহলে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবো। কারণ জমিদাতারা আদালত থেকে যে রিট দেখাচ্ছেন সেখানে থানা পুলিশের হস্তক্ষেপের বিষয়ে বলা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মাতুয়াইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অধীনে সব মিলিয়ে ২৪ জন কর্মরত রয়েছেন। এখানে বিনা মূল্যে গর্ভবতীসেবা, প্রসবসেবা, গর্ভোত্তরসেবা, এমআর সেবা, নবজাতকের সেবা, শূন্য থেকে ৫ বছর পর্যন্ত শিশুদের সেবা, প্রজননতন্ত্রের বা যৌনবাহিত রোগের সেবা, ইপিআই সেবা, ভিটামিন-এ ক্যাপসুল বিতরণসহ নানা সেবা দেয়া হতো যার অধিকাংশই এখন বন্ধ। কেন্দ্রটিতে পরিবার পরিকল্পনা সেবা বিশেষ করে পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক পরামর্শ প্রদান, খাবার বড়ি, জন্মনিরোধক ইনজেকশন, আইইউডি বা কপারটি, ইমপ্ল্যান্ট, ভ্যাসেকটমি এনএসবি (পুরুষদের স্থায়ী পদ্ধতি), লাইগেশন বা টিউবেকটমি (মহিলাদের স্থায়ী পদ্ধতি), পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ বা ব্যবহারজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জটিলতার সেবা দেয়া হতো। এখানে যদি নতুন ভবন নির্মাণ করে এসব সেবা চালু না করা যায় তাহলে লাখো মানুষ বঞ্চিত হবে। শুস্ক মৌসুমে এখানে সেবা দেওয়া যায়।

মাতুয়াইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা সালেহা বেগম বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এখানে চিকিৎসা নিতে আসি। বিনামূল্যে নানা ওষুধ পাই অথচ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি এখন দখল হয়ে যাচ্ছে ময়লা রাখার জন্য। এতে করে লাখো অসহায় মানুষ অনেক সমস্যায় পড়বেন।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শিল্পী রানী বলেন, দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে লাখো মানুষের সরকারি চিকিৎসাসেবা চলছে। অথচ দানকৃত এ জায়গাটি বেদখল হয়ে এসটিএস হবে অমানবিক এ বিষয়টা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায়না।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ মোবাইল ফোনে বলেন, ডিএসসিসির ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে এসটিএস নির্মাণের বিষয়ে আমার কাছে কোন নথিপত্র আসেনি। তবে এক্ষেত্রে মেয়র মহোদয়রে সঙ্গে কথা বললে আসল তথ্য জানা যাবে কারণ এসটিএসর বিষয়গুলো মেয়র মহোদয় নিজে দেখেছেন।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com